ব্লগ আর্কাইভস

রোজার প্রস্তুতি ও শাবান মাসের ফজিলত

হিজরি সালের আরবি চান্দ্রমাসের মধ্যে শাবান মাস মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল বরাতের মতো অত্যন্ত বরকতময় রজনী, যাকে বলা হয় পবিত্র মাহে রমজানের আগমনীবার্তা। কেননা শাবান মাস মুসলমানদের কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমান্বিত রমজান মাসের সওগাত নিয়ে আসে। রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় Read the rest of this entry

শাবান মাসের মর্যাদা

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

রাসূল সা: রজব মাসে দোয়া করতেন : অর্থ : ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদেরকে রমজান পাওয়ার তাওফিক দিন।’ শাবান মাসে তিনি অনেক নফল রোয়া রাখতেন। আয়েশা রা: বর্ণনা করেন : ‘আমি প্রিয় নবী সা:-কে রমজান মাস ছাড়া আর কোনো পূর্ণ মাসে রোজা রাখতে দেখিনি। আর শাবান মাস ছাড়া আর কোনো মাসে এত অধিক Read the rest of this entry

আজ দিবাগত রাতে পবিত্র শবেবরাত

 

আজ দিবাগত রাতে পবিত্র শবেবরাত পালিত হবে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভা সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আজ কোথায় ১৪৩৩ হিজরি সনের শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে ২১ জুন, কাল বৃহস্পতিবার পবিত্র রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে। সে ক্ষেত্রে ২২ জুন শুক্রবার থেকে শাবান মাস শুরু হবে। ঢাকা: মহিমান্বিত ভাগ্য রজনী পবিত্র শবে বরাত আজ। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি ভাগ্য নির্ধারণের রাতও বটে। বরকতময় এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও দয়া বর্ষিত হয়। ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমে পরবর্তী জীবনে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে মুসলমানরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এই রাত পালন করবে।

আরবিতে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনশেষে যে রাত শুরু হয় সে রাতকেই পবিত্র শব-ই-বরাত হিসেবে পালন করা হয়। সূর্যাস্তের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত পাপ মোচনের রাত বলা হয়ে থাকে।

ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, এ রাতেই মহান আল্লাহ মানুষের পরবর্তী বছরের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। পাশাপাশি নির্ধারিত হয় হায়াত-মউত, রিজিক-দৌলত-আমল। এ রাতেই যারা পরবর্তী বছরে জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ করবে তাদের তালিকা করা হয়। এ কারণেই রাতটি মুসলমানদের কাছে ভাগ্য নির্ধারণের রজনী হিসেবেও বিবেচিত। এ রাতে মুসলমানেরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যারা রিজিক অনুসন্ধানকারী তারা প্রার্থনা করবে রিজিকের জন্য। বিপদগ্রস্ত মানুষ বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করবে।

ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকতে মুসলমানদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন রহমত ও দয়ার ভাণ্ডার। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি উৎসবের রাতও।

ধর্মীয় দিকের পাশাপাশি ঐতিহ্যগতভাবে এ উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় মুসলিম সম্প্রদায়। তারা সাধ্যমতো ভালো খাবার তৈরি করে এবং প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের মাধ্যমে এর আনন্দটুকু ভাগ করে নেন। তবে এসব আয়োজনের চেয়ে এই রাতে গরিব-দুঃখীদের দান-খয়রাত করা এবং তাদের জন্য কিছু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করাই উত্তম।

পবিত্র শব-ই-বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও  মোবারকবাদ জানিয়েছেন। শব-ই বরাতের শিক্ষা ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রয়োগের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, “সৌভাগ্যের বারতা নিয়ে পবিত্র শব-ই-বরাত আমাদের মাঝে সমাগত। এই মহিমান্বিত রজনী মানবজাতিকে আল্লাহ্ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয়। পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তাও ঘোষণা করে শবেবরাত।”

এতে তিনি আরও বলেন, “ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়। শব-ই-বরাতের এই পবিত্র রজনীতে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি, কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মার বৃহত্তর ঐক্যের প্রার্থনা জানাই। পবিত্র শব-ই-বরাত সকলের জন্য ক্ষমা, বরকত, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক মহান আল্লাহর দরবারে এ কামনা করি।”

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, “সৌভাগ্যের রজনী এই রাত মানবজাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এই রাতে তিনি ক্ষমা এবং প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন।”

পবিত্র শব-ই-বরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণে ও দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি, সকল প্রকার কুসংস্কার ও কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “রহমতের এই রাত আমাদের জন্য উন্মুক্ত করুক শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে হেফাজত করুন।”

এদিকে শব-ই বরাত উপলক্ষে বিরোধীদলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।

শব-ই বরাত উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সংবাদপত্র অফিস বন্ধ থাকবে। সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হবে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।

শব-ই-বরাত উপলক্ষে রাতে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিটি মসজিদে বিশেষ ওয়াজ মাহফিল ও জিকির-আসকার অনুষ্ঠিত হবে। শব-ই বরাত উপলক্ষে মুসল্লিরা রাতভর নফল নামাজ আদায় করবেন। অনেকে রোজা রাখবেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় শব-ই বরাত উপলক্ষে রুটি ও হালুয়া তৈরির প্রচলন রয়েছে।

শবেবরাত উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, নাত, জিকির, মিলাদ, কিয়াম ও দোয়ার আয়োজন করেছে। এশার নামাজ শেষে বিশিষ্ট ওলামায়েকেরামরা রাতভর বয়ান করবেন। ফজরের নামাজের পর সুবহে সাদেকের সময় অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ মোনাজাত।

এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম চত্বরে ইসলামী বইমেলার আয়োজন করেছে।

এছাড়াও শব-ই বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এদিকে পবিত্র শব-ই বরাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে বিস্ফোরক, আতশবাজি বা পটকা বহন ও ফাটানো নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ।

নিজের জন্য প্রার্থনার পাশাপাশি আমরা দেশ ও বিশ্বমানবতার মঙ্গলেও সর্বশক্তিমান আল্লাহর করুণা প্রার্থনা করব। এই রাতের কল্যাণে সবার আগামী দিনগুলো সুন্দর ও মঙ্গলময় হয়ে উঠুক।